“ মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা জ্ঞানীর নিদ্রা শ্রেয় -- আল হাদিস ”

রাজ টেক্সটাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়

RAZ TEXTILE HIGH SCHOOL

স্কুল কোডঃ ৬১৫৯, EIIN নম্বরঃ ১১৫৪৯১

ব্রেকিং নিউজ
মাধ্যমিক শিক্ষায় কো কারিকুলাম এক্টিভিটিসের গুরুত্ব বব্লগ বিশদ

মাধ্যমিক শিক্ষায় কো কারিকুলাম এক্টিভিটিসের গুরুত্ব

Category : General

15-Sep-2025 | Shamim Akhter | 222 comments | 0 likes

মাধ্যমিক শিক্ষায় কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের গুরুত্ব

মাধ্যমিক স্তর শিক্ষার্থীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ সময়েই তারা নিজেদের দক্ষতা, আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ভিত্তি গড়ে তোলে। কিন্তু শুধু পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করলেই একজন শিক্ষার্থীর পূর্ণ বিকাশ ঘটে না। এজন্য প্রয়োজন সহ-শিক্ষাক্রম বা কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস, যা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীর লুকানো প্রতিভাকে বিকশিত করে।

কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি কী

কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি হলো শ্রেণিকক্ষের আনুষ্ঠানিক পাঠ্যসূচির বাইরে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে—

  • বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও কুইজ
  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (গান, নাচ, নাটক)
  • বিজ্ঞান মেলা ও প্রজেক্ট প্রদর্শনী
  • ক্রীড়া প্রতিযোগিতা (ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স)
  • স্কাউটিং ও গার্লস গাইডস
  • রেড ক্রিসেন্ট, সামাজিক সেবা কার্যক্রম
  • ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি জাতীয় দিবস উদযাপন
  • স্টুডেন্টস কাউন্সিল ও লিডারশিপ ট্রেনিং

এগুলো শিক্ষার্থীদের শুধু বিনোদন দেয় না, বরং তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে জীবন্ত করে তোলে।

১. ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা, কুইজ কিংবা নাটকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জনসম্মুখে কথা বলার ভয় কাটিয়ে উঠে। তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, তাদের চিন্তা ও মতামত প্রকাশের দক্ষতা বাড়ে।

২. নেতৃত্বগুণ ও দলগত দক্ষতা

যখন শিক্ষার্থীরা কোনো ইভেন্ট আয়োজন করে বা দলগতভাবে খেলাধুলায় অংশ নেয়, তারা দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্বের গুণ শেখে। একসাথে কাজ করা, সমস্যা সমাধান করা এবং দলকে এগিয়ে নেওয়া—এসব তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও কাজে লাগে।

৩. সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি

চিত্রাঙ্কন, বিজ্ঞান মেলা বা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করে। তারা নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করতে শেখে, যা ভবিষ্যতে গবেষণা বা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা

ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবান হয়। খেলাধুলা স্ট্রেস কমায়, মনোযোগ বাড়ায় এবং শৃঙ্খলা শেখায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ নেয় তারা পড়াশোনাতেও ভালো করে।

৫. সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ

স্কাউটিং, রেড ক্রিসেন্ট বা সামাজিক সেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শেখে। তারা সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও মানবিকতা শিখে, যা তাদের চরিত্র গঠনে সহায়ক।

৬. ক্যারিয়ার নির্বাচনে সহায়তা

অনেক শিক্ষার্থী সহ-শিক্ষাক্রমের মাধ্যমেই নিজের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য খুঁজে পায়। যেমন—একজন বিতার্কিক ভবিষ্যতে আইনজীবী হতে পারে, একজন বিজ্ঞান মেলা অংশগ্রহণকারী প্রকৌশলী হতে পারে।

বাংলাদেশে সহ-শিক্ষাক্রমের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন কো-কারিকুলাম কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কাউটিং, বিতর্ক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এও বলা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য সহ-শিক্ষাক্রম অপরিহার্য।

অনেক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাব, ভাষা ক্লাব, ড্রামা ক্লাব ও ক্রীড়া ক্লাব গঠন করা হয়েছে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখন নিয়মিত আয়োজন। তবে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতে এই কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা দরকার।

করণীয়

  • বিদ্যালয়ে আলাদা সময়সূচি রাখতে হবে কো-কারিকুলাম কার্যক্রমের জন্য।
  • শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
  • বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে, বিশেষ করে গ্রামীণ বিদ্যালয়ের জন্য।
  • শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে পুরস্কার ও স্বীকৃতি দিতে হবে।

উপসংহার

কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি মাধ্যমিক শিক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা, নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক দক্ষতা বাড়িয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করে। তাই শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, একজন সুস্থ, সচেতন ও দক্ষ নাগরিক তৈরি করতে বিদ্যালয়ে এ ধরনের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও নিয়মিত করা জরুরি।


রবিউল রানা, ১৫ ই সেপ্টেম্বর ২০২৫


 ব্লগ ক্যাটাগরি
 ব্লগ ট্যাগস
কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস কো-কারিকুলার
সম্পর্কিত ব্লগ
বিতর্ক  কী কেন?
বিতর্ক কী কেন?
15 - Sep - 2025 | 0 | 0

বিতর্কের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
বিতর্...