“ মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা জ্ঞানীর নিদ্রা শ্রেয় -- আল হাদিস ”

রাজ টেক্সটাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়

RAZ TEXTILE HIGH SCHOOL

স্কুল কোডঃ ৬১৫৯, EIIN নম্বরঃ ১১৫৪৯১

ব্রেকিং নিউজ
বোঝেনা সে বোঝেনা ! বব্লগ বিশদ

বোঝেনা সে বোঝেনা !

Category : General

30-Apr-2020 | MASTER ADMIN | 222 comments | 1 likes

‘‘আগুনে আর কতটুকু পোড়ে ?

সীমাবদ্ধ তার ক্ষয় সীমিত বিনাশ,

মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস। 


আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে 

কিছু থাকে 

হোক না তা ধূসর শ্যামল রঙ ছাই, 

মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না 

কিচ্ছু থাকে না 

খাঁ খাঁ বিরান .. ..’’  

-কবি হেলাল হাফিজ ।    

পাখি নামের পোশাকের জন্য আত্মহত্যা করেছে চাপাই নবাবগঞ্জের এক অভিমানী কিশোরী। পাখি ড্রেসের জন্য গেল ঈদের তিন চার দিন আগে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে অভয়নগরের এক স্কুলে ছাত্রী। গত দুই ঈদে শুধুমাত্র পাখি ড্রেসের জন্য বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে প্রায় ১৭ জন অভিমানী নারী। শুধুমাত্র পাখি ড্রেসের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এক ডজনেরও বেশী স্বামী স্ত্রীর। পাখি ড্রেস কি, বা তার মাহাত্ম  কি আমি নিশ্চিত লেখা যারা পড়ছেন বা এই অনুষ্ঠান যারা দেখছেন, তাদের কাছে নতুন কিছু বলার নেই। তবু বলি পাখি হলো ভারতীয় টিভি চ্যানেল ষ্টার জলসার আলোচিত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল “বোঝেনা সে বোঝেনা”র এক চরিত্র। পাখি চরিত্রের পোশাকই পাখি ড্রেস নামে বাজারে ঝড় তুলেছে। পাখি স্যান্ডেল, পাখি চুড়ি, পাখি শাড়ি, কি নেই পাখির নামে? 


সম্প্রতি একটি গবেষণা সংস্থা বাজারে জরিপ চালিয়েছে তাদের জরিপ বলেছে গত দুই ঈদ ও পূজোয় শুধুমাত্র পাখি ড্রেস কিনেছে ৭৫% নারী । শুধুমাত্র একটি ড্রেসের এত চাহিদা ও বিক্রি গত একশো বছরেও হয়নি এই বাংলাদেশে । গনমাধ্যম গবেষকরা বলেন টিভির দর্শকেরা দেশী চ্যানেল খুবই কম দেখেন। তাদের পছন্দের তালিকা দখল করে আছে ভারতীয় কিছু বাংলা ও হিন্দি চ্যানেল। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন টিভি চ্যানেল শুধুমাত্র টিভি চ্যানেল নয়, টেলিভিশন আজ নির্ধারন করে দেয় আমাদের রুচি, মন ও ফ্যাশানের গতি প্রকৃতি। টেলিভিশনই আমাদের মনোজগতে গড়ে তোলে স্বতন্ত্র উপনিবেশ। ঠিক করে দেয় আমরা কী খাবো, কেন খাবো, কিভাবে চলবো, কিভাবে বাঁচবো, কিভাবে বলবো। বদলে দেয় আমাদের সংষ্কৃতি ও মনুষত্ব্যের চিহ্ন গুলো। ফলে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের স্বকীয়তা, নিজস্বতা। লোপ পায় নৈতিকতা, বদলে যায় জীবনের মানে, বদলে যায় সুখের সংজ্ঞা। বদলে যায় দাম্পত্যের নকশা, পরিবারের সংজ্ঞা। অপসংষ্কৃতির সংস্পর্শে মানুষ হয়ে যায় অনৈতিক অমানুষ ধর্ষকামী ও বহুগামী। বেশি দিনের কথা না এইতো সেদিন পশ্চিম বঙ্গের মানুষ বাংলাদেশ টেলিভিশনে হুমায়ুন আহমেদের নাটক ও হানিফ সংকেতের ইত্যাদি দেখার জন্য টিভি এন্টিনার সাথে বাটি ঘটি লাগাত। আর আজ আমরা ঘটি বাটি বিক্রি করছি তাদের বস্তাপঁচা সিরিয়াল দেখার জন্য আমরা জীবন দিচ্ছি, সুখের দাম্পত্য বিসর্জন দিচ্ছি। সিরিয়াল দেখা নিয়ে স্বামীকে খুন করছি, সন্তানকে খুন করছি। নিজের মনের সৌন্দর্যকে নষ্ট করছি বস্তাপঁচা সব সিরিয়ালের চরিত্রহীন চরিত্রের জন্য। এখন সর্বত্রই বোঝেনা সে বোঝেনার জয়যাত্রা। আমি বুঝিনা, সরকার বোঝেনা, বিরোধীদল বোঝেনা, আদালত বোঝেনা, সংবাদপত্রও বোঝেনা, মুক্তিযোদ্ধা বোঝেনা ,রাজাকারও বোঝেনা। 


সত্যি কিন্তু তা নয়, সকলেই বোঝে। সবকিছুই বোঝে। পাখিও বোঝে অরণ্যও বোঝে। কৃষ্ণেন্দুও বোঝে। জেনে বুঝেই শালা দুলাভাই মিলে এক পাখির পিছেই ঘোরে। জেনে বুঝেই লম্পট কৃষ্ণেন্দু শালা বৌ এর জন্য লালায়িত হয়। প্রেমের নষ্ট ফাঁদ পাতে। ঘরে বউ রেখে জেনে শুনেই সিরিয়ালের পুরুষ মানুষগুলো পরকীয়ায় মাতে। একই ভাবে ঘরে বর থাকতেও সিরিয়ালের নারী গুলো বহুগামীতায় মেতে ওঠে। শুরু হয় বউ নিয়ে কাড়াকাড়ি বর নিয়ে মারামারি আর তাই সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর সবই বহুগামী। লিভ টুগেদার ও মাল্টিটুগেদার হিংসা প্রতিশোধ কুটনামী লোভ ছাড়া কোন সিরিয়ালই দর্শক খায় না। এইসব দর্শক ও সিরিয়াল নির্মাতারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন অনৈতিক ও বহুগামীতার অপসংষ্কৃতিতে বেড়ে ওঠা আমাদের  শিশু কিশোর কিভাবে নৈতিক হবে ? কিভাবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আচরণ করবে ? তাদের আচরন জীবন যাত্রা ও সংসার কীভাবে সুন্দর  হবে ? আপনার সিরিয়ালের নেশা আপনার সন্তানকে নীতিহীন মানসিক প্রতিবন্ধি ও অমানুষ হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে নাতো ? আপনার অসুস্থ বিনোদন আপনার সন্তানের সুস্থ মানসিক বিকাশকে গলাটিপে হত্যা করছে নাতে? আপনি নিশ্চিত তো?


সিরিয়ালের দর্শকদের ৯০% নারী ও শিশু। এটাই স্বাভাবিক কারণ পুরুষ ও বড়দের বিনোদন বা খেলাধুলার জন্য ঘরের বাইরে যাবার সুযোগ আছে। বিনোদনের জন্য নারী ও শিশুদের সেই সুযোগ খুবই কম। তারা একুট বেশী টিভি অবশ্যই দেখতেই পারে। কিন্তু শুধু বিদেশী সিরিয়াল কেন? দেশের নাটক, সিনেমা, গান, নাচ, ইত্যাদি কি দেখার মতো নয়?  তার এই সিরিয়াল বিনোদন যদি তার প্রিয় আত্মজার সুস্থ-মানবিক আবেগগুলোকে, অনুভূতিকে নষ্ট করে ফেলে; তাহলে  নিকট ভবিষ্যতে তার সন্তানরা যখন প্রেমিক নিয়ে কাড়াকাড়ি, শাশুড়ি বা মায়ের সাথে ঝগড়াঝাটি-বেয়াদবি করবে, লিভ টুগেদার বা কনট্রাক্ট ম্যারেজের নষ্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে। তখন এই নারীরা ভাল থাকতে পারবেন তো ? নিজের মুখে নিজে থুথু ছিটাতে হবে নাতো সেদিন ? সিরিয়ালের নেশা এখন বিড়ি সিগারেট বা ইয়াবার চেয়েও ১০/১৫ গুন বেশি নেশাজাত উপকরণ।


সিরিয়ালের সর্বনেশা নেশায় থেমে গেছে আমাদের দেশের সমৃদ্ধ সাং®ৃ‹তিক পরিবার। লেগেছে অশান্তির দাবানল, মানবিকতা ও নৈতিকতা আইসিসিউতে লাইফ সার্পোটে কোন রকমভাবে বেচেঁ আছে। আমরা শুধুুমাত্র শারীরিক ভাবে মৃত মানুষের রেকর্ড রাখি। ইবোলো আর এইডস নিয়ে শুধুমাত্র আতঙ্কিত হই। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি ঘরে মনের মৃত্যু ও মনুষ্যত্বের মৃত্যুর রেকর্ড সংগ্রহ করার জন্য কোনো ডিজিটাল মাইন্ড মিটার যদি বসিয়ে রাখি সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। তাহলে দেখতে পাবো মনুষত্বের মৃত্যুর সংখ্যা হবে ইবালো বা এইডসের চেয়েও কয়েকশ গুন বেশী। দেখতে পাবো সিরিয়ালের বিষে নারী-শিশুদের মৃত্যুর মহা-মিছিল। প্রাপ্ত বয়ষ্কদের কথা না হয় বাদই দিলাম। শিশু ও কিশোরদের মানবিক অনুভূতি গুলো আবেগগুলো, সুস্থ নিউরনগুলো সিরিয়াল  নামক দাবানলের আগুনে যে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।


সবচেয়ে বড় কথা সিরিয়ালে পরকীয়া, লিভ-টুগেদার, প্রেম-বিয়ৈ নিয়ে যা যা হয়, আমার বা আপনার পরিবারে এগুলো হলে আমি-আপনি কি তা মেনে পারবো? পরিবারের কেউ প্রেম বা বিয়ের নামে এরকম নষ্টামী করলে আমরা কি সমাজে মুখ দেখাতে পাররো ? লজ্জায় বা অপমানে আপনার কি মরে যেতে ইচ্ছে করবে না ? গভীরভাবে একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখবেন কি ?


প্রিয় পাঠক, আমি জানি আপনি তা কিছুতেই মেনে নিতে পারবেন না। আমি এটাও জানি আপনি ভীরু নন, আপনারাও কাপুরুষ নন। তাই আসুন সবাই যার মতো করে অপসংষ্কৃতির এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধে সংগঠিত হই। সুস্থ সং®ৃ‹তির আলোয় শুদ্ধ হই আলোকিত হই, মানুষের মতো মানুষ হই। আসুন আগুনের পরশমনি ছোয়াই প্রাণে ।

           প্রিয় কবি হেলাল হাফিজকে দিয়ে শুরু করেছিলাম প্রিয় কবিকে দিয়েই না হয় আজ শেষ করি- 

“মানব জন্মের নামে কলঙ্ক হবে

এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,

উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো...” 



(শামীম আখতার শিমুল) 

সম্পাদক

রঙ-পেন্সিল ও কম্পিউটার শিক্ষক, রাজ টেক্সটাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুঠোফোন-০১৯১১৭৪৮৮৪৮, 

 ব্লগ ক্যাটাগরি
 ব্লগ ট্যাগস
সম্পর্কিত ব্লগ
বিতর্ক  কী কেন?
বিতর্ক কী কেন?
15 - Sep - 2025 | 0 | 0

বিতর্কের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
বিতর্...

মাধ্যমিক শিক্ষায় কো কারিকুলাম এক্টিভিটিসের গুরুত্ব
মাধ্যমিক শিক্ষায় কো কারিকুলাম এক্টিভিটিসের গুরুত্ব
15 - Sep - 2025 | 0 | 0

মাধ্যমিক শিক্ষায় কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভ...